বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, বিগত দিনে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক বিরোধীতার কারণে ধর্মের নামে জাতিকে বিভক্ত করা হয়েছে। আমরা ধর্মের নামে বিভক্তির দেয়াল ভেঙ্গে দিতে চাই। সকলে মিলে মিশে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাই। খুলনা হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষেত্রে অনন্য। শত শত সনাতন ধর্মাবলম্বীর অংশগ্রহণে শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রাকে নির্বিঘ্নে পালন করতে হিন্দু ভাই-বোনদের পাশে জামায়াত অতীতের মতো পাশে থাকবে। শুধু রথযাত্রা নয়, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ভাইদের সকল ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। কোন স্বার্থান্বেষী মহল গুজব ছড়িয়ে যাতে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর থানাধীন পাবলা মধ্যেপাড়া মন্দিরে হিন্দু ধর্মালম্বী ও মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এ সব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, জামায়াত জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের জন্য উন্নত ও মানবিক সেবা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। আপনারা যেকোন সমস্যার কথা আমাদেরকে নিঃসংকোচে বলবেন। আপনারা আপনাদের সমস্যার কথা না বলতে পারলে আমরা ধরে নেবো আপনারা আমাদেরকে আপন মনে করতে পারছেন না। যেকোন মানবিক সেবা দিতে আমরা সব সময়ই আন্তরিক।
তিনি বলেন, অন্তবর্তী সরকার রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর একটি অবাধ, সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। তিনি একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তবর্তকালীন সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান।
মহানগরী আমীর আরও বলেন, সম্প্রীতিতে বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল। এখানে কোন ধর্মীয় ভেদাভেদ নেই। অধিকারের ক্ষেত্রে আমরা সকলেই সমান। আমাদের সংবিধানও প্রতিটি নাগরিকের জন্য সে নিশ্চয়তা দিয়েছে। আর জামায়াতে ইসলামী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ পরিসরে আন্দোলন করে যাচ্ছে। জামায়াত কোন দিন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হবে। দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত নারীরা একাকী ভ্রমণ করলেও তাদের দিকে কেউ চোখ তুলবে না। এমনি একটি ইনসাফ ও ন্যায়বিচারপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। যেখানে সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষের অধিকারের নিশ্চয়তা থাকবে। জামায়াত দেশের বেকার সমস্যার সমাধান ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা দেশের শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছি। এক্ষেত্রে কোন ধর্মীয় ভেদাভেদ আমরা করি না বরং মানুষকে ভালোবেসেই আমরা আমাদের আদর্শের প্রচার ও প্রসার ঘটাতে চাই। তিনি দেশের স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কোন দায়িত্বশীল রাজনৈতিক শক্তিকে আস্থায় নেওয়ার আহবান জানান।
তিনি বলেন, দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জাতীয় শত্রুদের চিহ্নিত করে সম্মিলিতভাবে তাদেরকে মোকাবেলা করতে হবে। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের চেতনাই ছিল সকল ক্ষেত্রে ন্যায়, ইনসাফ ও জাস্টিস প্রতিষ্ঠা। তাই এই চেতনা থেকে আমাদের পিছপা হওয়ার কোন সুযোগ নেই। তিনি ফ্যাসীবাদী আমালের দেশের লুটপাট, দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রসঙ্গে বলেন, যারা চাঁদাবাজী, ঘুষ, দখলদারি ও দুর্নীতির সাথে জড়িত তারাই জাতীয় শত্রু জামায়াতের নেতা-কর্মী তো দূরের কথা কোন সমর্থকের বিরুদ্ধে এসব অপকর্মের কোন অভিযোগ নেই বরং আমরা এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে সব সময়ই সোচ্চার। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই জাতীয় শত্রুদেরকে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবলা করার আহবান জানান।
দৌলতপুর থানা আমীর মুশাররফ আনসারীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি ও মহানগরী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজী। এ সময় মহানগরী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. সাঈদুজ্জামান, দৌলতপুর থানা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ইসমাইল হোসেন পারভেজ, ৪নং ওয়ার্ড আমীর রেজাউল ইসলাম, ৬ নং ওয়ার্ড আমীর আমিনুল ইসলাম, ৫নং ওয়ার্ড সেক্রেটারি ইবাদত হোসেন, পাবলা মধ্যপাড়া সার্বজনীন পূজা মন্দিরের সহ-সভাপতি প্রকাশ চন্দ্র অধিকারী, গুরুদাস কুন্ডু, শ্যামল শীল, সাধারণ সম্পাদক তারক মজুমদার, সহ-সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় রায়, কোষাধ্যক্ষ নিতাই মন্ডল, সাধন ভট্টাচার্য, কমল শীল, জয়দেব মল্লিক, দীপ ব্যানার্জি, অর্ণব বসু, অনুব কুন্ডু, বিষ্ণু রায়, দেবাশীষ সরকার, পার্থ শীল, দেব শিকারী, গনেষ দে, নিখিল সাহা, বিষ্ণু দে, রেখা ধর, বিথিকা বিশ্বাস, মুকুল বিশ্বাস, জামায়াত নেতা শরিফুল ইসলাম পারভেজ, খোরশেদ আনোয়ার বিরাজ, মতিয়ার রহমান, জাহাঙ্গীর আলম, আলী রেজা তাওয়াব, হাকিম উদ্দিন, গোলাম মোস্তফা, হাফিজুর রহমান পিন্টু, ফিরোজ গাজী, নিজাম উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
খুলনা গেজেট/এমএম